ব্যানার ছবিঃ

ব্যানার ছবিঃ আন্তর্জাল

রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১১

১৬ অক্টোবর – বিশ্ব খাদ্য দিবস

আজ ১৬ অক্টোবর, বিশ্ব খাদ্য দিসব। ১৯৭৯ সালে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) ২০তম সাধারণ সভায় হাঙ্গেরির তৎকালীন খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রী ড. প্যাল রোমানী বিশ্বব্যাপী এই দিনটি উদযাপনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১৯৮১ সাল থেকে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিষ্ঠার দিনটিতে (১৬ অক্টোবর, ১৯৪৫) দারিদ্র ও ক্ষুধা নিবৃত্তির নিমিত্তে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে এই দিনটি গুরুত্ত্বের সাথে পালিত হয়ে আসছে; এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়, “সঙ্কট নিরসনে সহনশীল খাদ্য মূল্য”। 

একটি দেশের নাগরিকগণের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে খাদ্য অন্যতম। তাই গত কয়েক দশকে পৃথিবীর আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে চাষযোগ্য জমি সংরক্ষণ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, কৃত্রিম বনায়ন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর সবগুলো উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশ, বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যস্ত হয়ে আছে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। পৃথিবীজুড়ে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং আরো কয়েকটি বিষয়ের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এখন সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যের মধ্যে একটি। 

খাদ্য নিরাপত্তা বলতে খাদ্যের লভ্যতা এবং মানুষের খাদ্য ব্যবহারের অধিকারকে বোঝায়। কোন বাসস্থানকে তখনই “খাদ্য নিরাপদ” বলে মনে করা হয়, যখন এর বাসিন্দারা ক্ষুধার্ত অবস্থায় বসবাস করেন না কিংবা খাদ্যাভাবে উপবাসের কোন আশঙ্কা করেন না। বিশ্ব খাদ্য সম্মেলন (১৯৯৬) অনুযায়ী “খাদ্য নিরাপত্তা তখনই আছে বলে মনে করা হয় যখন সকল নাগরিকের সব সময়ের জন্যে যথেষ্ট পরিমাণে, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য প্রাপ্তির প্রত্যক্ষ ও অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা থাকে যা তাঁদের সক্রিয় ও সুস্থ জীবন নিশ্চিতকরণের জন্যে সঠিক পরিমাণ খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে।” 

বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা অনেকটাই ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং ধানের মূল্য স্থিতিকরণের সমার্থক। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে সাথে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ প্রভূত সাফল্য অর্জন করলেও জনসঙ্খ্যার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধির দরুন নির্দিষ্ট পরিমাণ চাষযোগ্য জমির উপর সৃষ্ট চাপের জন্যে এই অগ্রগতি বজায় রাখা বেশ কঠিন। বন্যা, খরা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আভ্যন্তরীণ খাদ্য শস্য উৎপাদন ব্যাহত হয় যা খাদ্যের যোগানে অপ্রতুলতা সৃষ্টি, পাইকারি ও খুচড়া বাজারে চালের মূল্যের ঝুকিপুর্ণ ওঠানামার স্থায়ী হুমকি নিশ্চিত করে।
 
এমন সব প্রপঞ্চ বিবেচনায় এনে প্রতি বছর প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্য সরবরাহের জন্যে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা’র (FAO) পাশাপাশি বাংলাদেশও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে জাতীয় খাদ্য নীতি ২০০৬ ও জাতীয় খাদ্য নীতি : কর্ম পরিকল্পনা ২০০৮-২০১৫ উল্লেখযোগ্য। এই নীতিগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো- 

• যথেষ্ট পরিমাণ পুষ্টিকর খাদ্যের স্থায়ী সরবরাহ নিশ্চিতকরণ
• সর্বসাধারণের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি ও খাদ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণ
• সবার জন্যে, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের যথেষ্ট পরিমাণ পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ 

বাংলাদেশের আয়তন ১,৪৫,৫৭০ ব.কি. (৫৬,৯৭৭ ব.মা.) এবং বর্তমান জনসঙ্খ্যা প্রায় ১৫.৮৫ কোটিরও বেশি। জনসঙ্খ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১০৭৪.৫৪ জন! মাথাপিছু আয় মাত্র ৬৩৮ ডলার। মানব উন্নয়ন সূচক ০.৪৬৯ (HDI)। দেশের ৪০% মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে অবস্থান করছে এবং ৪৬% শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। অর্থাৎ পরিমিত এবং পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহে আমরা চরমভাবে ব্যার্থ। 

বাংলাদেশ সরকার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে বেশ অনেক বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং জাতিসঙ্ঘসহ আরো কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান মনে করে খাদ্যোৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য উল্লেখযোগ্য। গত এপ্রিল মাসে (২ এপ্রিল, ২০১১) খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মুহম্মদ আব্দুর রাজ্জাক এক বিবৃতিতে বলেন যে বাংলাদেশ সরকার আগামী পাঁচ বছরের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যে প্রায় ৮০০ কোটি ডলারের একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কিন্তু খাদ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণে শুধুমাত্র বৃহৎ পরিসরে পরিকল্পনা গ্রহণ নয় বরং মাঠ পর্যায়ে খাদ্যের সঠিক বন্টন নিশ্চিতকরণও খাদ্য নিরাপত্তার একটি অংশ। কিন্তু বাংলাদেশের কৃষকগণ, যারা আমাদের মোট জনসঙ্খ্যার ৪৫%, তাঁদের উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না। কঠোর পরিশ্রমের পর পাইকারি ক্রেতাদের এক রকম জবরদস্তির ভেতর দিয়ে তাদেরকে নাম মাত্র মূল্যে ফসল বিক্রি করতে হয় যা ঢাকায় আসার পথে একাধিক স্থানে সরকারি টোল ছাড়াও স্থানীয় নেতাদের বেসরকারি টোল (!), বিভিন্ন চেক পয়েন্টে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে চাঁদা প্রদাণ এবং শহুরে আড়তদারদের কারসাজীতে দ্বিগুণ-ত্রিগুণ দামে খুচরা বাজারে বিক্রি হয়। ফলশ্রুতিতে কৃষক তাঁর প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হন এবং সাধারণ ভোক্তাগণ অধিক অর্থ খরচ করে চরম দূর্ভোগ পোহান। অর্থাৎ, প্রান্তিক এবং শহুরে উভয় দলের নাগরিকগণ ক্রমশ সাধারণ ক্রয় ক্ষমতা হারাচ্ছেন। খাদ্যের বন্টন ব্যবস্থাপনায় দূর্নীতির জন্যে এবং প্রান্তিক জনগণ ক্রয় ক্ষমতার নিচে অবস্থানের ফলে জাতীয় খাদ্য নীতির কোন শর্তই পূরণ হচ্ছে না এবং এই পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত স্থায়ী হয়ে উঠছে। এমন অবস্থায় ২০১৫ সালের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন সম্ভব নাকি তা নিছক আষাঢ়ে গল্প তা প্রশ্নের সম্মুখীন! 


রেফারেন্সঃ

মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১১

অভাবিত নাফাখুম!


নাফাখুমের নাম প্রথম জানতে পারি টিঙ্কু চৌধুরীর “দেশের পথে”র ফেসবুক পাতায়, তারপর ইউটিউবে দেশের পথে’র ভিডিও দেখি। অনেকেই একে বাংলাদেশের নায়াগ্রা বলছিলেন। আগ্রহ তাই ক্রমশ আকাঙ্খার চূড়ায় উঠে যাচ্ছিলো দিন দিন। তাই এবারের ঈদের পর বেশ লম্বা ছুটির সুযোগ নিয়ে কয়েক বন্ধু মিলে বেরিয়ে পরলাম।

ঈদ পরবর্তী সময়ে টিকিটের অপ্রতুলতার জন্যে ঢাকা – বান্দরবান কোন টিকিট পাইনি আমরা। আট জনের দলের জন্যে ঢাকা – চট্টগ্রাম এবং তারপর চট্টগ্রাম – বান্দরবান বাস ধরতে হলো আমাদের। দিনটি ছিল ৩ সেপ্টেম্বর’ ২০১১। পরের দিন অর্থাৎ ৪ তারিখ দুপুর ১২টায় বান্দরবান পৌঁছে দুপুর আড়াইটায় থানচির টিকিট কাটলাম। এর আগের ভ্রমণগুলোতে থানচি রুটে আমাদের দলের কেউই যাইনি। তাই নীলগিরি পাশ কাটানোর সাথে সাথে পাহাড়সাড়ির সৌন্দর্য্যের প্রতি বিস্ময়বোধ আমাদের গ্রাস করলো! নীলগিরির চূড়া থেকে দক্ষিণের অতিদূরবর্তী যে দীর্ঘ পাহাড়সাড়ি দেখা যায়, সেটা পেড়িয়ে গিয়ে থানচি উপজেলার শুরু। পথে একস্থানে পাহাড় ধ্বসের জন্যে বাস বদল করতে হলো; এরপর আরো প্রায় ঘন্টা দেড়েক চলার পর থানচি। বাসে মোট সময় লাগে ৫ ঘন্টা।

বাস থেকে নেমে সিমেন্ট বাধাই করা সিড়ি বেয়ে ধূসর থানচির পাড়। জনপ্রতি নৌকা পাড়াপাড় ৫ টাকা। নৌকা থেকে নামার সাথে সাথে স্থানীয় এক ছেলে জুটে গেল; নিজেকে সানন্দে আমাদের গাইড হবার জন্যে উপস্থাপন করলো। সে রেমাক্রি, নাফাখুম, আন্ধারমানিক বা এমন এলাকাগুলোতে ঘুরাতে নিয়ে যাবার জন্যে নানান কথা বলছিলো বিরতিহীন। তবে আমরা তার কথায় পুরোপুরি মেতে না গিয়ে থানচি বাজার বিজিবি ক্যাম্পে গেলাম; নাফাখুম যাবার জন্যে বা প্রথম রাতটি থানচি বাজারে কাটাবার জন্যে করণীয় পরামর্শের জন্যে।
             
এক্ষেত্রে প্রথমত আপনাকে আপনার গন্তব্যের সময় এবং দুরত্বের কথা উল্লেখ করে গাইড এবং প্রয়োজনে মাঝি/বোট ঠিক করতে হবে এবং গাইড ও মাঝির নাম সমেত আপনার পুরো দলের প্রত্যেক সদস্যের নাম, ঠিকানা এবং মোবাইল নম্বর দুটি কাগজে নথি করে যথাক্রমে বিজিবি ক্যাম্পে এবং থানচি থানায় জমা দিতে হবে। বিজিবি ক্যাম্পের অনুমতি সাপেক্ষে আপনি পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারবেন। তবে বিশেষ কোন অঘটন ছাড়া সব সময়ই ভ্রমণের অনুমতি পাওয়া যায়। বোট এবং গাইড ঠিক করার সময় সতর্ক থাকতে হবে কারণ এরা এদের ইচ্ছে মতোন ভাড়া হেঁকে বসে! রুমা বাজারে গাইড ভাড়া স্থানীয় আর্মি ক্যাম্প দ্বারা নির্ধারীত করা থাকলেও এখানে এখনো তা হয়নি। ১১.০৯.২০১১ তারিখে স্থানীয় গাইডদের দল, বিজিবি, পুলিশ এবং স্থানীয় ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষের একটি সভার মাধ্যমে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসবার কথা।
            থানচি পৌছাবার পর আমাদের মতনই এক দল পর্যটক পেয়ে গেলাম, তারা সেদিনই নাফাখুম থেকে ফিরেছেন। তাদের দলনেতার পরামর্শে তাঁর পরিচিত দুজন মাঝিকে ঠিক করলাম। ঠিক হলো পরদিন সকালে রেমাক্রি রওনা দেবো; ঐ দিনই সন্ধ্যার মধ্যে থানচি ফিরবো। একজন গাইড ঠিক করলাম যে আমাদের সাথে থাকবে থানচি থেকে রেমাক্রি পর্যন্ত। সে আমাদের নিয়ে গেল মূল ঘাটের পাশেই অবস্থিত একটি বোর্ডিং হাউসে। ৫০০ টাকার বিনিময়ে দুটি ঘর ভাড়া নিলাম। রাতের খাবার এখানকারই একটি হোটেলে সারলাম। রাতে ঘুমাবার আগে ঘাটে বসে সাঙ্গুর পাড়ে, চন্দ্রালোকে আড্ডা দিলাম বেশ।
মূল থানচি বাজার বেশ বড়। উত্তর-দক্ষিণে এর ব্যাপ্তি বেশি। বাজারে দুটি খাবার হোটেল আছে। চারপাশের দোকানিরা তাদের দোকানের সামনের অংশে পসরা সাজায় আর পেছনের অংশে বাস করে। কয়েকটি দোকানে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকলেও রাতের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো হয় জেনারেটরের মাধ্যমে। জেনারেটরের মাধ্যমে রাত ১০-১০.৩০ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এই সময়ের মধ্যেই মোবাইল এবং ক্যামেরার ব্যাটারী চার্জ করে নিতে হবে। এখানে শুধুমাত্র টেলিটক এবং রবি’র নেটওয়ার্ক কাজ করে। থানচির আশেপাশে কিছুদূর গিয়ে রবি এবং তারপর আরো দূরে টেলিটকের নেটওয়ার্ক গায়েব হয়ে যায়। তাই আগে থেকেই সাবধান!

পরিকল্পনা মাফিক পরদিন সকাল ৮টায় আমরা বোটে করে রওনা দিলাম নাফাখুমের উদ্দেশ্যে। আগের রাত থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিলো, বোট ছাড়ার পরপর সেটা বেড়ে যাচ্ছিলো ক্রমশ দক্ষিণে এগোতে এগোতে। যতো এগিয়ে যাচ্ছিলাম ততোই সরু হচ্ছিলো সাঙ্গু নদী। দুপাশের পাহাড়গাত্র কাছাকাছি চলে আসছিলো। একটু একটু করে সমুদ্র সমতল থেকে উপরের দিকে উঠেছিলাম আমরা। সাঙ্গুর প্রতিটি বাঁকে স্রোতের তীব্রতা আর শিলা ডিঙিয়ে আসা জলের ফেনিল ধারায় আমাদের মুগ্ধতা বেড়ে যাচ্ছিলো প্রতিনিয়ত! বাঁকের বিপরীতে জেগে ওঠা অস্ফুট বালুচরগুলোও অসাধারণ; প্রত্যেকবারই মনে হচ্ছিলো নেমে গিয়ে তার নুড়ি পাথরের কিনারে দাঁড়াই, নিশ্চুপ হয়ে থাকি নদী আর নদীসমতল থেকে উঠে যাওয়া সুউচ্চ পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে!
প্রায় দেড় ঘন্টা উজানে চলার পর আমরা তিন্দু ঘাটে পৌছলাম। উজানে যাবার পথে ডান দিকে বেশ প্রশস্ত একটি বাঁকে তিন্দু বাজার অবস্থিত। পাড়ে নেমে সিড়ি ভেঙে ২০-২৫ ফিট উপরে উঠতে হলো। এখানে আমরা থামবো মিনিট বিশের জন্যে। এখানে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা ছিলো তবে আমাদের পরিকল্পনা এখানে সাময়িক বিশ্রামের পর আবারো রেমাক্রির পথে যাত্রা করা।
            
বিশ্রামের পর আবারও উজানের দিকে রওনা দিলাম। বোট ছাড়ার মিনিট পনের পর থানচি – রেমাক্রি নদীপথের সবচাইতে বিপদজনক তিনটি বাঁকের কাছে পৌছলাম। এখানে স্রোত এতটাই বেশি যে দক্ষতা আর অভিজ্ঞতা ছাড়া এগিয়ে যাওয়া একেবারেই ঠিক নয়। দুটি বোটকে দেখলাম যাত্রীসহ দুই কিনারে থেমে থাকতে; তীব্র ধাক্কা সামলাবার চেষ্টা করে মূল স্রোতে ফিরে আসার চেষ্টা করছে! এই বাঁকগুলো পেড়িয়ে আরো মিনিট দশেক পর “বড় পাথর” পৌছলাম। প্রচণ্ড স্রোতের বিপরীতে বিশাল বিশাল পাথরের পাশ কেটে উজানে যাওয়া বেশ উত্তেজনাকর এবং ঝুঁকিপূর্ণ! আমাদের দক্ষ মাঝি সেটা করছিলো অবলীলায়! “বড় পাথর” হলো সাঙ্গু নদীর এমন একটি স্থান যেখানে বাম পাশের (থানচি-রেমাক্রি পথে) প্রায় ৭৫০-৮০০ ফিট উঁচু পাহার থেকে বিশাল বিশাল পাথর খণ্ড ধ্বসে পড়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে সাঙ্গুর ওপর পতিত সবচেয়ে বড় পাথরটিকে স্থানীয়রা “রাজা পাথর” বলে ডাকে।


“বড় পাথর” পেড়িয়ে আরো ঘন্টাখানেকের পর প্রশস্ত রেমাক্রিখুমের সম্মুখে পৌছে গেলাম। এর পরই রেমাক্রি বাজার। রেমাক্রি ঘাটে নামার সময় আরো দুটো বোট আমাদের অতিক্রম করে চলে গেল সাঙ্গু ধরে আরো ভেতরে; ঐ পথে আন্ধারমানিক যাওয়া যায়। ঘাটেই আমাদের থানচি গাইডের পরিচিত একজন স্থানীয় গাইড পেলাম যে আমাদেরকে নাফাখুম নিয়ে যাবে। সেই গাইডকে অনুসরণ করে তাঁর বাসায় গিয়ে উঠলাম। এখানে বিশ্রাম নেব আধা ঘন্টা। বিজিবি এবং স্থানীয় হেডম্যানের চুক্তি অনুযায়ী এখান থেকে অন্যত্র যেতে হলে স্থানীয় গাইড নিতে হবে। নতুন এই গাইডের পারিশ্রমিক ৫০০ টাকা ঠিক হলো। এখানকার বিজিবি ক্যাম্পে আমাদের সবার নাম, ঠিকানা আর মোবাইল নম্বর জমা দিয়ে, গাইডের ঘরে সবার মালামাল রেখে রওনা দিলাম নাফাখুমের উদ্দশ্যে।
            এখান থেকে নাফাখুম পর্যন্ত পুরো পথটুকু হেঁটে যেতে হবে। শুরুতেই দুটো পাহাড় টপকালাম। দ্বিতীয় পাহাড়ের চূড়া থেকে রেমাক্রি খালের একাংশ চোখে পড়ে। উপর থেকে সেটা দারুন একটা দৃশ্য! তারপর আরো মিনিট পনের হাঁটার পর নাফাখুমের জলধারার যে ঝিরি অর্থাৎ রেমাক্রি খাল, সেটা পার হতে হলো। পানি ঠান্ডা আর স্রোতও বেশ। ওখানে পানির গভীরতা তখন ৪ ফিটের মতন ছিলো; পায়ের কাছাকাছি দেখা যায় না বলে সাবধানে, প্রতি পদক্ষেপ মেপে, ধীরে ধীরে পেরিয়ে গেলাম আমরা। স্রোত বেশি হলে লাঠি বা দড়ির সাহায্য নিয়ে একে অপরের সাথে মানব বন্ধন তৈরি করে পার হওয়া যেতে পারে। সেই উদ্দেশ্যে রেমাক্রি বাজার থেকে বেশ লম্বা দড়ি কিনে নিয়েছিলাম। এরপর আবার হন্টন। ডানে-বায়ে সুউচ্চ পাহাড় রেখে আমরা হেঁটে যাচ্ছিলাম নদী উপত্যকা দিয়ে। কিছুক্ষণ পরপর থেমে দাড়াচ্ছিলাম আমি; নিশ্চুপ হয়ে দেখছিলাম চারপাশের অপার সৌন্দর্য্য। সামনে থেকে বাঁক নিয়ে এসে নদীটা হারিয়ে গেছে আরেক বাঁকে, আরেক পাহাড়ের আড়ালে। পুরো দৃশ্যপটে জল, পাহাড় আর আকাশের অংশগ্রহণে চলছে সৌন্দর্য্যের প্রতিযোগিতা। মৃদু বাতাস আর জলধারার কুলকুল শব্দের সাথে চারপাশে বেশ উপভোগ্য একটা নির্জনতা ছেয়ে আছে! 

  আমাদের পথ একটু একটু করে কমে আসছিলো আর তার সাথে সাথে পথের প্রকৃতিও পালটে যাচ্ছিলো। কোথাও হাঁটছিলাম পাহাড়ের একদম শরীর ঘেঁষে যেখানে পা ফেলার জন্যে সামান্য ফাঁকা জায়গা আর অন্যপাশে খাঁদ নেমে গেছে ১৫-২০ ফিট নিচে বড় পাথর পড়ে থাকা খালে। কোথাও হাঁটছিলাম পিচ্ছিল পাথরের ওপর দিয়ে, পা হড়কে গেলে সোজা তীব্র স্রোতের খালে গিয়ে পড়তে হবে। আবার কখনো এগুতে হচ্ছিলো নদীর পাড় ঘেষে নুড়ি পাথর, বালু জমে থাকা পথ ধরে। এই খালটা মোট তিন কিস্তিতে এপাড়-ওপাড় করতে হয়। তৃতীয় বারে পানি হলো বুক সমান আর তার সাথে প্রচন্ড স্রোত। পায়ের নিয়ে পিচ্ছিল উঁচু নিচু পাথর আরো কঠিন করে দেয় ব্যাপারটাকে।
            দুইবার বিশ্রাম নিয়ে প্রায় আড়াই ঘন্টা হেঁটে নাফাখুমের কাছে পৌছলাম আমরা। এর মধ্যে দুটি দলের আরো কয়েকজন পর্যটকদের পেলাম। সবারই এক কথা, “নিজের চোখে না দেখলে মিস করবেন”। সিকি মাইল দূর থেকেই নাফাখুমের জল পতনের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। জলধারার পাড় থেকে কিছুটা উপরে উঠতে হলো। অতি উত্তেজনাতেও সাবধানে হাটতে হচ্ছিলো কারণ এখানে পাথর বেশ পিচ্ছিল। যখন নাফাখুমের কাছাকাছি পৌছলাম তখন সবাই ক্লান্তি ভুলে হতবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম এই অভাবিত সৌন্দর্য্যের দিকে! প্রচণ্ড গর্জনে পানি নেমে আসছে, পতিত হচ্ছে ফিট বিশেক নিচে। ঝিরিঝিরি বাতাসে কুয়াশার মতোন জলকণা চারিদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে। কাছাকাছি যেতে ভয় লাগে আবার দূরেও থাকতে পারি না; পাথর শ্যাওলা ধরা এবং খুব পিচ্ছিল জেনেও! স্থির, নেশাগ্রস্ত হয়ে একটানা তাকিয়ে দেখছি। 

আমরা বেশ পশ একটা সময়ে এখানে পৌছেছি; নাফাখুমের পানি শীতের জলস্বল্পতার দরুন কমে যায়নি আবার বৃষ্টিস্নাত হয়ে টইটুম্বুর হয়নি। বাম পাশ দিয়ে আরো কিছু দূর গিয়ে নাফাখুমের পেছনে পৌছে যাওয়া যায়। সেখান থেকে এর সৌন্দর্য্য একদম ভিন্ন রূপে পাওয়া যায়। শীতের সময় পানি কমে গেলে এর বাম দিকে দ্বিতীয় ধাপের নিচে প্রাকৃতিক গর্তটি দৃশ্যমান হয়। তখন খুব সহজেই সেখানে নেমে যাওয়া যায়। বছর দেড়েক আগে আলোচনায় আসা এই ঝর্ণার কাছে খুব কম পরিমাণ পর্যটক এসেছে এর মধ্যে। ঘন্টা খানেক ছিলাম সেখানে, আসাধারণ একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে আবার ফিরতি পথে রওনা দিলাম। এমন একটা বৃহৎ প্রাপ্তির পর অল্প চেনা পথটাও তখন সহজ আর নখদর্পণে বলে মনে হচ্ছিলো!




থানচি বা নাফাখুমের পথে সম্ভাব্য খরচ এবং ব্যবস্থা এমন-
>        ঢাকা – বান্দরবান
বাস; ৩০০-৪০০ টাকা; ৭-৯ ঘন্টা
>         বান্দরবান – থানচি
বাস; ১৬৫ টাকা; ৫-৬ ঘন্টা
জীপ; ৪০০০-৫০০০ টাকা; ৪-৫ ঘন্টা
>         সাঙ্গু নদী পারাপার; জনপ্রতি ৫ টাকা
>         ঘর ভাড়া
প্রতি রুম; ২০০-৪০০ টাকা
প্রতি বেডিং; ৫০-৭০ টাকা প্রতি রাত
>         খাবার
গড়পরতায় নাস্তা ৫০-৮০ টাকা; দুপুর এবং রাতের খাবার ৭০-১২০ টাকা। হোটেলে আগেই কথা বলে রাখা ভালো। এতে প্রাপ্তির উপর নির্ভর করে ইচ্ছে মতোন মাছ, মাংস, সবজি বা ডিমের ব্যাপারটি নিশ্চিত করা যায়।
>         থানচি গাইড
বিজিবি কর্তৃক এখনো গাইড ভাড়া নির্দিষ্ট করা হয়নি তাই গাইডের সাথে কথা বলে ঠিক করে নেয়া ভালো। দিন প্রতি ৩০০-৫০০ টাকা ভাড়া তবে একাধিক দিনের পরিকল্পনায় পুরো প্যাকেজ ঠিক করে নেয়া যেতে পারে।
>         বোট
গন্তব্যের দূরত্বের উপর নির্ভর করে ৩০০০-৭০০০ টাকা ভাড়া; এক্ষেত্রে ভ্রমণ পরিকল্পনায় যদি তিন্দু বা রেমাক্রিতে রাত কাটাতে হয় তবে মাঝি/বোট আপনাদের সাথে থাকবে। সেটা বিবেচনায় রেখেই বোট ভাড়া করতে হয়। শীত মৌসুমে ঠ্যালা নৌকার জন্যে প্রতি দিনের ভাড়া ১০০০ টাকা।
>         তিন্দুতে থাকার ব্যবস্থা
এখানে মারমাদের বাস। এই আদিবাসীদের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। তবে যে বাড়িতে আপনি থাকবেন, সেখানেই আপনাকে খাবার খেতে হবে। খাওয়ার খরচ তিন বেলায় ২০০ টাকা। এক্ষেত্রে থাকার জন্যে কোন খরচ দিতে হবে না। মোবাইল নেটওয়ার্ক আছে শুধুমাত্র টেলিটকের। মোবাইল চার্জ দেবারও ব্যবস্থা আছে।  
>         রেমাক্রি
রেমাক্রি চেয়ারম্যানের নাম আফ্রো মং; তাঁর একটা রেস্ট হাউজ আছে এখানে, একটা পাহাড়ের মাথায়। এক রুমের ভাড়া ৫০০ টাকা, ১০-১২ জন থাকা যায়। রেমাক্রি বাজারে খাবার খরচ জনপ্রতি ৬০-৭০ টাকা। আগে থেকে কথা বলে দাম ঠিক করে নেয়া ভালো। গাইডের ভাড়া ৩০০-৫০০ টাকা।

শীতের সময় থানচি থেকে বোট ছাড়াও হেঁটে রেমাক্রি, নাফাখুম যাওয়া যায়। তখন থানচি থেকে রেমাক্রি পৌঁছতে ৫-৬ ঘন্টা সময় লাগে। “বড় পাথর” স্থানটি ভালো করে ঘুরে দেখা যায় কারণ তখন স্রোত খুব একটা থাকে না। রেমাক্রি থেকে নাফাখুম যেতে দুটো রুট আছে। একটা রেমাক্রি বাজারের আগে রেমাক্রিখুমের মুখ থেকে আর অন্যটা রেমাক্রি বাজার থেকে দুটো পাহাড় ডিঙিয়ে তারপর রেমাক্রি খালের পাড় ধরে। প্রথম ক্ষেত্রে রেমাক্রি খাল পেরোতে হবে চার বার, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে তিন বার। সময়ের পার্থক্যে ৩০-৪০ মিনিট বেশি লাগবে প্রথম রুটে।

শুক্রবার, ১২ আগস্ট, ২০১১

বদলে যাবার জন্যে...


নিজেকে বদলে দেবার জন্যে বেশ শোরগোল শুরু হয়েছে; “পরিবর্তনেই সম্ভব দেশ ও জাতিকে বদলে দেয়া”। আদপে সেটা বেশ সত্যি। একটি দেশের পরিবর্তনে সরকারি বা রাজনৈতিক উদ্যোগের শুরুটি হয় সেই দেশের নাগরিকদের সমন্বয়ে, নাগরিকদের মধ্য থেকে। কারণ সরকার যদি নিরাপত্তা বা মৌলিক অধিকার বিষয়ক কোন নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার জন্যে উদ্যোগী হয়ে কোন আইন প্রণয়ন করেন তবে তা বাস্তবায়নের জন্যে সরকার এবং নাগরিক উভয়ের যুগপৎ অংশগ্রহণ এবং পারস্পরিক সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এরকম কর্মকাণ্ডে যে কোন একটি বা উভয় পক্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত হলে আইনের সঠিক বাস্তবায়ন অসম্ভব। ঠিক ঐ মূহুর্তে নিজেকে তথাপি দেশকে বদলে দেবার প্রস্তাবনা অলিক বলেই মনে হয়। তবে প্রগতিশীল মানুষরা হাল ছাড়তে নারাজ এবং অনভ্যস্ত। তাই তাঁরা অতীব প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সমাধান খোঁজেন এবং সফল হন। বোধকরি এমন মানুষ আছে বলেই আমাদের “তলাহীন ঝুড়ি” এই দরিদ্রতম, তৃতীয় বিশ্বের বাংলাদেশ এখনো টিকে আছে!

বদলে যাবার প্রশ্নে উঠে এসেছে পরিবর্তনের প্রকৃতি ও প্রকৃয়াটি। কী করলে আসলে আমাদের পরিবর্তন সম্ভব?
হুম, উত্তর আসলে খুবই সহজ! “চিন্তাধারা এবং কর্মকাণ্ডের পরিবর্তন”। সৎ হতে হবে, ধৈর্যশীল হতে হবে। নিজেরটি ছাড়াও অন্যের সুবিধা ও অধিকারের কথা ভাবতে হবে। নিজের কোন কর্মকাণ্ড অন্যের ক্ষতি সাধন করছে কীনা সেটা খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ সার্বিকভাবে সঠিক সামাজিক আচরণ মেনে চলতে হবে। ব্যাপারটা খুব কঠিন নয় আবার সহজও নয়। একটি একটি করে ছোট ছোট কাজে আচরণের পরিবর্তন এই প্রকৃয়াকে খুব সহজেই এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। প্রকৃয়াটি ব্যাখ্যায় দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দৈনন্দিন সব কাজগুলোকে নির্দেশ করা যায়। যেমন – 

  • সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আপনার প্রথম কাজ প্রাতঃহ্রাস। সেখানে পানি কম খরচ করুন। দাঁত মাজা, শেভ করার সময় অনেকেই পানির কল ছেড়ে রাখেন; এমনটা করবেন না। হাতে সাবান মাখার সময় কল বন্ধ রাখুন। সব রকম কাজে পানি যথাসম্ভব কম ব্যবহার করুন।
  • ভোর বেলা বাসার সবগুলো বাতি জ্বালানোর প্রয়োজন হয় না। সেদিকে খেয়াল রাখুন।
  • নাস্তা তৈরির সময় গ্যাসের ব্যবহারে সাশ্রয়ী হোন। একটি দুটি দিয়াশলাই কাঠি বাঁচানোর জন্যে গ্যাসের অপচয় গ্রহণযোগ্য নয়। কাপড় শুকানোর জন্যে গ্যাস ব্যবহার করবেন না।
  • কর্মক্ষেত্রে বা সন্তানের স্কুলে যেতে ভোরবেলা সবারই কম বেশি তাড়া থাকে। তাই বলে নিজের তাড়াহুড়ার জন্যে অন্যের তাড়াকে অগ্রাহ্য করবেন না। হেটে যেতে যেতে আপনার সম্মুখ-পশ্চাতে খেয়াল রাখুন।
  • মুখে ধুলোবালি বা অন্যকিছু প্রবেশের কারণ ছাড়া থুতু ফেলবেন না। থুতুর মাধ্যমে ৪৫০টিরও বেশি জীবাণু ছড়ায়।
  • পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। ঘরে-বাইরে, ছোট-বড়ো কাজে পরিচ্ছন্ন থাকুন। যেখানে সেখানে কাগজ, বোতল বা উচ্ছিষ্ট পরিত্যাক্ত করবেন না। বাসের টিকেটের মতোন চকলেট বা চুইঙ্গামের খোসা পকেটে রাখার অভ্যাস করুন।
  • সরকারের আইন মানুন বা না মানুন, ভিড়ে বা মানুষের সমষ্টিতে ধূমপান করবেন না।
  • বাসের লাইনে দাড়াতে হলে তা অনুসরণ করুন। অন্যের লাইনচ্যুত হওয়া যেহেতু আপনি গ্রহণ করেন না সেহেতু খেয়াল রাখুন আপনি যেনো কখনো তা না করেন। বাকবিতণ্ডায় অশ্লীল শব্দ ব্যবহারে বিরত থাকুন। কোন কিছু বলার আগে মনযোগ দিয়ে শুনুন।
  • বাসে উঠে নির্দিষ্ট কোটার আসন পরিকল্পনা মেনে বসুন। কোটা পরিকল্পনা নিয়ে বিতর্ক করবেন না কারণ তা আগেই নির্ধারিত হয়ে আছে। পারস্পরিক সহযোগিতা করুন। বাসের জানালা খোলা-বন্ধ করা এবং এমন কাজে সতর্ক হোন। বাস থেকে নামার সময় সতর্ক থাকুন।
  • রিক্সা, সিএনজি, ট্যাক্সি ভাড়া করার সময় উত্তেজিত হবেন না। চালকগণ অতিরিক্ত ভাড়া চাইলে স্বাভাবিক মেজাজে, হাসি মুখে কথা বলে সমঝোতা করার চেষ্টা করুন। কটু বাক্য ব্যবহারে সমাধান একেবারেই হবে না কারণ আমাদের শহরগুলোতে মিটারের ব্যবহার অথবা নির্দিষ্ট ভাড়া তালিকা মেনে চলার রীতি বা উদাহরণ একেবারেই অপ্রতুল।
  • যে কোন রকম কেনাকাটায় রশিদ গ্রহণের সুযোগ থাকলে তার প্রাপ্তি নিশ্চিত করুন। অনেক দ্রব্যে সরকার থেকে চালানের ব্যবস্থা রয়েছে, সেগুলো সংগ্রহ করুন। কেনাকাটায় মতামতের মিল না হলে শান্ত থেকে কথা বলুন, নিজে থেকে শ্রুতিকটু বা অপমানকর কোন মন্তব্য করবেন না।
  • সহকর্মী, সহপাঠীদের সাথে সহনশীল হোন। সমঅধিকারে বিশ্বাসী এবং অভ্যস্ত হোন।

আচরণের এমন সতর্কতায় আমাদের চিন্তাধারা পাল্টাবে, কর্মকাণ্ড পাল্টাবে। আমরা প্রতিনিয়ত একটি সুস্থ নিয়মে আবর্তিত হবো।

ওপরের কথাগুলো খুবই পরিচিত এবং আমরা তা নিয়মিত শুনে আসছি, আলোচনা করছি; কিন্তু তা পুরোপুরি মেনে চলার ক্ষেত্রেও অনীহা দেখাচ্ছি। এটা আমাদের প্রকট স্ববিরোধী আচরণের বহিঃপ্রকাশ। ঠিক একই রকম আচরণ অনাবৃষ্টি ও অতিবৃষ্টিতে দেখা যায়। টানা কয়েক সপ্তাহের অনাবৃষ্টিতে আমাদের প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত তখন টানা সপ্তাহ খানেকের অতিবৃষ্টি দ্বারা সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় আমাদের শাপান্তরের শেষ থাকে না! (আমাদের আবহাওয়া এবং রাস্তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য!!)। দূর্ভোগের ক্ষেত্রে অবশ্যই আমরা আমাদের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করবো কিন্তু এখানে আমি নির্দেশ করছি আমাদের বক্তব্য প্রকাশে শব্দ নির্ধারণের দিকে। আচরণে আমরা কেমন তা আমাদের বক্তব্যে প্রকাশ পাবে, সেটাই মানুষের প্রকৃতি। আমাদের চর্চা হবে এমন যেনো আমরা চিন্তায় যৌক্তিক হই আর আমাদের চারপাশের সবাইকে এমনটা হবার জন্যে প্রভাবিত করতে পারি।

এখানে আমার সাথে অধিকাংশ ব্যাক্তি দ্বিমত প্রকাশ করবেন কারণ সৎ ও ধৈর্যশীল হলে প্রায়শই পিছিয়ে যেতে এবং প্রতারিত হতে হয়। হ্যা, সেটা ঠিক কিন্তু স্বাভাবিক নয়। এটা নিশয়ই মান্য যে অন্যায় সব সময়ই ন্যায়ের কাছে অবনমিত হয়ে থাকে আর তাই অন্যায়ের বৈপরিত্বে সবসময়ই অবস্থান নেয়া যায়। যদিও দুর্নীতিগ্রস্ত স্থানে, ব্যাক্তির কাছে পূর্বোক্ত বাক্যের মূল্য একেবারেই নেই তবু চেষ্টা করতে ক্ষতি কী? আমরা বেশি আয় করতে চেষ্টা করি, বেশি আনন্দে থাকতে চেষ্টা করি, অনেকে বেশি কাজ করতে চেষ্টা করি। তাহলে আরেকটু সৎ এবং সতর্ক থাকার চেষ্টা করতে সমস্যা কী? একটি দেশের রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি সেই দেশের গুটিকয়েক ব্যাক্তি এবং গোষ্ঠির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় কিন্তু তাই বলে সাধারণ নাগরিকরা হাল ছেড়ে দিয়ে বসে থাকে না। তারা নানান মাধ্যমকে আশ্রয় করে অসন্তোষ, অসহযোগ প্রকাশ করে, বিদ্রোহ করে। তেমনটা ঘটে বলেই সরকার তার নীতিসমূহে পরিবর্তন আনেন (যদিও আমাদের দেশে অধিকাংশ সময়ই তা রাজনৈতিক স্বার্থবিজড়িত)। কিন্তু আমরা নিজেরাই যদি সৎ এবং সতর্ক না হই, সঠিকত্ব অনুসরণ না করি তাহলে পরিবর্তিত হতে পারবো না একেবারেই!

বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০১১

শবের কবিতা


তারপর লেখা হয় শবের কবিতা-
মৃদু বাতাসে অদূরে অশুত্থ গাছের পাতা ওড়ে
শবের প্রচ্ছদের
সাদা আলোকচ্ছটা কাঁপে,
মুখাগ্নির পর জ্বলতে থাকে শব
দাউ দাউ দাউ দাউ;
কটু গন্ধটাও একজনের কাছে আকাঙ্খিত
মানুষ সরে যাবার পরই সে এগিয়ে আসে
গত দুদিন সে খায়নি
তাঁর ক্ষুদার্ত চোখ জ্বলতে থাকে
দাউ দাউ দাউ দাউ।