গত সপ্তাহে, আমরা মোট বারো জন বন্ধু মিলে সিলেটে অবস্থিত
বাংলাদেশের একমাত্র জলাবন বা সোয়াম্প ফরেস্ট,
রাতারগুল গিয়েছিলাম। পৃথিবীর খুব অল্প কিছু মিঠাপানির
জলাবনের মধ্যে এটি একটি। সিলেট শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই জলাবনে বেশ
কিছু প্রজাতির উদ্ভিদ এবং প্রাণীর বসবাস। ডিঙি নৌকা নিয়ে বনে প্রবেশের কিছুক্ষণের
মধ্যেই হেড়ে গলার, চরম
বিরক্তিকর চিৎকার শুনে ভ্রু কুঁচকে গিয়েছিলো আমার। অর্থহীন আচরণের জন্যে মানুষকে
টেক্কা দেয়া সহজ নয়।
বনের মূল উদ্ভিদের মধ্যে হিজল, করচ আর বরুন
উল্লেখযোগ্য। স্তন্যপায়ীদের মধ্যে রয়েছে বেজী ও বানর; সাপ ও গুইসাপসহ
কয়েক প্রজাতির সরিসৃপ; পাখিদের
মধ্যে রয়েছে সাদা বাজ, শকুন, চিল, পানকৌড়ি, মাছরাঙা, সাদা বক, কানা বক; মাছেদের মধ্যে
রয়েছে রুই, কাতলা, কালবাউশ, আইড় এবং আরো কিছু
প্রজাতি।
এই ভিডিওতে ছবির পাশাপাশি আমার দলের কয়েকজনসহ
অন্যান্য পর্যটকদের হেড়ে গলার চিৎকারের জন্যে দুঃখ প্রকাশ করছি। স্বকীয়তা বজায়
রাখার জন্যে শব্দ বাদ না দিয়ে ভিডিওটি তুলে দিলাম।
কিভাবে এখানে যাওয়া যাবে তা আলাদা করে বলছি না, সংযুক্ত লিঙ্কগুলো
থেকে সে তথ্য পেয়ে যাবেন!
ফুল, ফল, পিঠা-পুলি,
পাখি, বৃক্ষ এমন অনেক বিষয়ে প্রতি বছর বাংলাদেশের নানা স্থানে নানা ঋতুতে অনুষ্ঠিত
হয়ে আসছে এক বা একাধিক দিনব্যাপী উৎসব এবং মেলা। এসব মেলা বা উৎসবে আয়োজক ছাড়াও সর্বসাধারণের
অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হয়ে থাকে। বাঙালিয়ানা চর্চার ধারাবাহিকতা আর ক্ষেত্র
সৃষ্টিই সাধারণত এসব উৎসবের মূল উদ্দেশ্য। বাঙালী ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আর সম্পৃতির অনুপ্রাসে
বাঙলায়ন ফাউন্ডেশনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান, টোটেম একাডেমী গত ৪ জুন পালন করেছে “ভর্তা
উৎসব ১৪১৯” যা তাঁরা গত সাত বছর ধরে নিয়মিত আয়োজন করছেন।
পুরান ঢাকার
একটি অন্যতম শিক্ষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্র হলো টোটেম একাডেমী। এর শিক্ষার্থী ছাড়াও
তাঁদের অভিভাবক, এলাকাবাসী, পরিচিতজন- সবার জন্যে নিজের পছন্দমতো যে কোন এক বা
একাধীক প্রকার ভর্তা তৈরি করে এই উৎসবে অংশগ্রহণের সুযোগ ছিলো। ভর্তার স্বাদ নয়
বরং পরিবেশনের সৌন্দর্য্যের ওপর নির্ভর করে পুরষ্কারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিলো এবারো।
সকাল ১১টা থেকেই
ধীরে ধীরে টোটেম একাডামীর শিক্ষার্থী, অভিভাবক, অতিথি আর আয়োজকদের উপস্থিতিতে মুখর
হয়ে ওঠে সূত্রাপুর কমিউনিটি সেন্টার। একের পর এক আসতে থাকে হরেক রকম ভর্তার
রঙ-বেরঙের থালা, বাটি, ট্রে। আলু ভর্তা দিয়ে কেউ গাড়োয়ানসমেত গরুর গাড়ি তৈরি করে
তা সাজিয়ে এনেছেন, কেউ বা পুর করেছেন করলা দিয়ে কুমির তৈরি করে, আরেকজন এসেছেন
ধুন্দলের মধ্যে ধনে পাতার ভর্তা নিয়ে। দারুন দৃষ্টিকাড়া ভর্তার পরিবেশনে দীর্ঘায়িত
হচ্ছিলো ভর্তার সারি। ১২৬ জন অংশগ্রহণকারী মোট ১০৬ ধরণের ভর্তা উপস্থাপন করেছিলেন!
কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ভর্তার নাম বলা যেতে পারে, যেমন, ইলিশ মাছ, গরুর মাংস, খাসীর
মাংস, মুরগীর মাংস, ইলিশ মাছের কানসা, তরমুজের খোসা, এমন কি চীনা বাদামের ভর্তাও
ছিলো। অংশগ্রহণকারী সবগুলো ভর্তার পরিপূর্ণ একটি তালিকা এই লেখার শেষে সংযোজিত হয়েছে।
টোটেম একাডেমীর
পরিচালক, শফিক মনজু বললেন, বাঙালীরা অনেক কাল ধরেই খাদ্যাভ্যাসে ভর্তা গ্রহণ করে
আসছে যদিও বাঙালী অধ্যুষিত স্থানগুলোতে রয়ে যাওয়া কয়েকশ’ প্রকার ভর্তার পরিচিতি
নিয়ে আলাদা করে কোন আয়োজন বা উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আমাদের উদ্দেশ্য পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশে
নববর্ষ বরণের মতোই প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে ভর্তা খেয়ে বিগত বছরকে বিদায়
দেয়া।
এবারের ‘ভর্তা
উৎসব’ ১৪১৯’এর প্রধান অতিথি ছিলেন লেখক ও শিক্ষাবিদ হায়াৎ মামুদ। বিশেষ অতিথি
ছিলেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আলমগীর সিকদার লোটন, লেখক
আহমদ মজহার, কথাশিল্পী পারভেজ হোসেন, ফজলুল হক মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ
অশোক কুমার সাহা, গেণ্ডারিয়া কিশলয় কঁচিকাঁচার মেলার পরিচালক শফিউর রহমান দুলু,
চ্যানেল আই’এর প্রযোজক, সঙ্গীত শিল্পী পুনম প্রিয়ম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্থানীয়
মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান ছাড়াও বিজয়ী শ্রেষ্ঠ ভর্তা তৈরিকারক, পাতা
সংগ্রাহক, টোটেম একাডেমীর এ বছরের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করা
হয়।
টোটেম একাডেমী ভর্তা
উৎসব ছাড়াও বাৎসরিকভাবে ভাষা উৎসব, পাতা সংগ্রহ উৎসব, গণিত উৎসব উদযাপন করে আসছে।