নিজেকে বদলে দেবার জন্যে বেশ শোরগোল শুরু হয়েছে; “পরিবর্তনেই সম্ভব দেশ ও জাতিকে বদলে দেয়া”। আদপে সেটা বেশ সত্যি। একটি দেশের পরিবর্তনে সরকারি বা রাজনৈতিক উদ্যোগের শুরুটি হয় সেই দেশের নাগরিকদের সমন্বয়ে, নাগরিকদের মধ্য থেকে। কারণ সরকার যদি নিরাপত্তা বা মৌলিক অধিকার বিষয়ক কোন নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার জন্যে উদ্যোগী হয়ে কোন আইন প্রণয়ন করেন তবে তা বাস্তবায়নের জন্যে সরকার এবং নাগরিক উভয়ের যুগপৎ অংশগ্রহণ এবং পারস্পরিক সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এরকম কর্মকাণ্ডে যে কোন একটি বা উভয় পক্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত হলে আইনের সঠিক বাস্তবায়ন অসম্ভব। ঠিক ঐ মূহুর্তে নিজেকে তথাপি দেশকে বদলে দেবার প্রস্তাবনা অলিক বলেই মনে হয়। তবে প্রগতিশীল মানুষরা হাল ছাড়তে নারাজ এবং অনভ্যস্ত। তাই তাঁরা অতীব প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সমাধান খোঁজেন এবং সফল হন। বোধকরি এমন মানুষ আছে বলেই আমাদের “তলাহীন ঝুড়ি” এই দরিদ্রতম, তৃতীয় বিশ্বের বাংলাদেশ এখনো টিকে আছে!
বদলে যাবার প্রশ্নে উঠে এসেছে পরিবর্তনের প্রকৃতি ও প্রকৃয়াটি। কী করলে আসলে আমাদের পরিবর্তন সম্ভব?
হুম, উত্তর আসলে খুবই সহজ! “চিন্তাধারা এবং কর্মকাণ্ডের পরিবর্তন”। সৎ হতে হবে, ধৈর্যশীল হতে হবে। নিজেরটি ছাড়াও অন্যের সুবিধা ও অধিকারের কথা ভাবতে হবে। নিজের কোন কর্মকাণ্ড অন্যের ক্ষতি সাধন করছে কীনা সেটা খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ সার্বিকভাবে সঠিক সামাজিক আচরণ মেনে চলতে হবে। ব্যাপারটা খুব কঠিন নয় আবার সহজও নয়। একটি একটি করে ছোট ছোট কাজে আচরণের পরিবর্তন এই প্রকৃয়াকে খুব সহজেই এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। প্রকৃয়াটি ব্যাখ্যায় দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দৈনন্দিন সব কাজগুলোকে নির্দেশ করা যায়। যেমন –
- সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আপনার প্রথম কাজ প্রাতঃহ্রাস। সেখানে পানি কম খরচ করুন। দাঁত মাজা, শেভ করার সময় অনেকেই পানির কল ছেড়ে রাখেন; এমনটা করবেন না। হাতে সাবান মাখার সময় কল বন্ধ রাখুন। সব রকম কাজে পানি যথাসম্ভব কম ব্যবহার করুন।
- ভোর বেলা বাসার সবগুলো বাতি জ্বালানোর প্রয়োজন হয় না। সেদিকে খেয়াল রাখুন।
- নাস্তা তৈরির সময় গ্যাসের ব্যবহারে সাশ্রয়ী হোন। একটি দুটি দিয়াশলাই কাঠি বাঁচানোর জন্যে গ্যাসের অপচয় গ্রহণযোগ্য নয়। কাপড় শুকানোর জন্যে গ্যাস ব্যবহার করবেন না।
- কর্মক্ষেত্রে বা সন্তানের স্কুলে যেতে ভোরবেলা সবারই কম বেশি তাড়া থাকে। তাই বলে নিজের তাড়াহুড়ার জন্যে অন্যের তাড়াকে অগ্রাহ্য করবেন না। হেটে যেতে যেতে আপনার সম্মুখ-পশ্চাতে খেয়াল রাখুন।
- মুখে ধুলোবালি বা অন্যকিছু প্রবেশের কারণ ছাড়া থুতু ফেলবেন না। থুতুর মাধ্যমে ৪৫০টিরও বেশি জীবাণু ছড়ায়।
- পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। ঘরে-বাইরে, ছোট-বড়ো কাজে পরিচ্ছন্ন থাকুন। যেখানে সেখানে কাগজ, বোতল বা উচ্ছিষ্ট পরিত্যাক্ত করবেন না। বাসের টিকেটের মতোন চকলেট বা চুইঙ্গামের খোসা পকেটে রাখার অভ্যাস করুন।
- সরকারের আইন মানুন বা না মানুন, ভিড়ে বা মানুষের সমষ্টিতে ধূমপান করবেন না।
- বাসের লাইনে দাড়াতে হলে তা অনুসরণ করুন। অন্যের লাইনচ্যুত হওয়া যেহেতু আপনি গ্রহণ করেন না সেহেতু খেয়াল রাখুন আপনি যেনো কখনো তা না করেন। বাকবিতণ্ডায় অশ্লীল শব্দ ব্যবহারে বিরত থাকুন। কোন কিছু বলার আগে মনযোগ দিয়ে শুনুন।
- বাসে উঠে নির্দিষ্ট কোটার আসন পরিকল্পনা মেনে বসুন। কোটা পরিকল্পনা নিয়ে বিতর্ক করবেন না কারণ তা আগেই নির্ধারিত হয়ে আছে। পারস্পরিক সহযোগিতা করুন। বাসের জানালা খোলা-বন্ধ করা এবং এমন কাজে সতর্ক হোন। বাস থেকে নামার সময় সতর্ক থাকুন।
- রিক্সা, সিএনজি, ট্যাক্সি ভাড়া করার সময় উত্তেজিত হবেন না। চালকগণ অতিরিক্ত ভাড়া চাইলে স্বাভাবিক মেজাজে, হাসি মুখে কথা বলে সমঝোতা করার চেষ্টা করুন। কটু বাক্য ব্যবহারে সমাধান একেবারেই হবে না কারণ আমাদের শহরগুলোতে মিটারের ব্যবহার অথবা নির্দিষ্ট ভাড়া তালিকা মেনে চলার রীতি বা উদাহরণ একেবারেই অপ্রতুল।
- যে কোন রকম কেনাকাটায় রশিদ গ্রহণের সুযোগ থাকলে তার প্রাপ্তি নিশ্চিত করুন। অনেক দ্রব্যে সরকার থেকে চালানের ব্যবস্থা রয়েছে, সেগুলো সংগ্রহ করুন। কেনাকাটায় মতামতের মিল না হলে শান্ত থেকে কথা বলুন, নিজে থেকে শ্রুতিকটু বা অপমানকর কোন মন্তব্য করবেন না।
- সহকর্মী, সহপাঠীদের সাথে সহনশীল হোন। সমঅধিকারে বিশ্বাসী এবং অভ্যস্ত হোন।
আচরণের এমন সতর্কতায় আমাদের চিন্তাধারা পাল্টাবে, কর্মকাণ্ড পাল্টাবে। আমরা প্রতিনিয়ত একটি সুস্থ নিয়মে আবর্তিত হবো।
ওপরের কথাগুলো খুবই পরিচিত এবং আমরা তা নিয়মিত শুনে আসছি, আলোচনা করছি; কিন্তু তা পুরোপুরি মেনে চলার ক্ষেত্রেও অনীহা দেখাচ্ছি। এটা আমাদের প্রকট স্ববিরোধী আচরণের বহিঃপ্রকাশ। ঠিক একই রকম আচরণ অনাবৃষ্টি ও অতিবৃষ্টিতে দেখা যায়। টানা কয়েক সপ্তাহের অনাবৃষ্টিতে আমাদের প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত তখন টানা সপ্তাহ খানেকের অতিবৃষ্টি দ্বারা সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় আমাদের শাপান্তরের শেষ থাকে না! (আমাদের আবহাওয়া এবং রাস্তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য!!)। দূর্ভোগের ক্ষেত্রে অবশ্যই আমরা আমাদের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করবো কিন্তু এখানে আমি নির্দেশ করছি আমাদের বক্তব্য প্রকাশে শব্দ নির্ধারণের দিকে। আচরণে আমরা কেমন তা আমাদের বক্তব্যে প্রকাশ পাবে, সেটাই মানুষের প্রকৃতি। আমাদের চর্চা হবে এমন যেনো আমরা চিন্তায় যৌক্তিক হই আর আমাদের চারপাশের সবাইকে এমনটা হবার জন্যে প্রভাবিত করতে পারি।
এখানে আমার সাথে অধিকাংশ ব্যাক্তি দ্বিমত প্রকাশ করবেন কারণ সৎ ও ধৈর্যশীল হলে প্রায়শই পিছিয়ে যেতে এবং প্রতারিত হতে হয়। হ্যা, সেটা ঠিক কিন্তু স্বাভাবিক নয়। এটা নিশয়ই মান্য যে অন্যায় সব সময়ই ন্যায়ের কাছে অবনমিত হয়ে থাকে আর তাই অন্যায়ের বৈপরিত্বে সবসময়ই অবস্থান নেয়া যায়। যদিও দুর্নীতিগ্রস্ত স্থানে, ব্যাক্তির কাছে পূর্বোক্ত বাক্যের মূল্য একেবারেই নেই তবু চেষ্টা করতে ক্ষতি কী? আমরা বেশি আয় করতে চেষ্টা করি, বেশি আনন্দে থাকতে চেষ্টা করি, অনেকে বেশি কাজ করতে চেষ্টা করি। তাহলে আরেকটু সৎ এবং সতর্ক থাকার চেষ্টা করতে সমস্যা কী? একটি দেশের রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি সেই দেশের গুটিকয়েক ব্যাক্তি এবং গোষ্ঠির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় কিন্তু তাই বলে সাধারণ নাগরিকরা হাল ছেড়ে দিয়ে বসে থাকে না। তারা নানান মাধ্যমকে আশ্রয় করে অসন্তোষ, অসহযোগ প্রকাশ করে, বিদ্রোহ করে। তেমনটা ঘটে বলেই সরকার তার নীতিসমূহে পরিবর্তন আনেন (যদিও আমাদের দেশে অধিকাংশ সময়ই তা রাজনৈতিক স্বার্থবিজড়িত)। কিন্তু আমরা নিজেরাই যদি সৎ এবং সতর্ক না হই, সঠিকত্ব অনুসরণ না করি তাহলে পরিবর্তিত হতে পারবো না একেবারেই!
shimul valo laglo lekhata..eikhane add kori ai amra Bangal-rai vin deshe gele/ashle ritimoto palte jai...amrai rasta dekhe par hoi, lal bati thakle raste faka thakleo opekkharoto thaki gari shomet, thutu felina shorbotro, moyla pothe ghate na fele pokete dhukai, dustbin dekhle felbo bole...gaite sit belt chara cholina..rastar goti shima longhon kori na shohosha...aishob khaslot amara cantonment alakay o kotok palon kori...obossho kotota system er karone r kotota fine eranor jonno bola mushkil...firingider belay o ai kotha khathe...2/3 sho dollar fine kom taka na, ek masher khabar khoroch..hopta age ek firingike 4000 dollar fine dite dekhchi ek garite halka dhakka dear mashul..arohi shobai okkhoto chilo...vabnar khorak ache..//
উত্তরমুছুনপলাশঃ একদম ঠিক বলেছেন! জরিমানা আর প্রশাসনের চাপে না মেনে যদি আমরা এমনিতেই মেনে চলি তাহলে আমাদের খুব একটা কষ্ট হবে না আবার অন্যদিকে সবকিছু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসবে! কিন্তু সেটা করতেও আমাদের কাছে নিজেদের ওপর এক রকম স্বেচ্ছাচারের মতো লাগে!!
উত্তরমুছুনAppreciate your step.....
উত্তরমুছুন